গর্বে ভাসছেন সেদিনের অপমানিত কার্তিকেয়র বাবা
একসময় কিটস কেনার সামর্থ ছিল না। সেই ছেলে এখন ক্রিকেটের মহাযজ্ঞের মঞ্চে। পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে চোখে জল ঝাঁসির কনস্টেবল শ্যামনাথ সিংহের চোখে। ছেলের জন্য একসময় ক্রিকেট কিট কেনার টাকাও ছিল না এই কনস্টেবলের। কী ঘটেছিল শ্যামনাথ সিংয়ের সঙ্গে? বছর আষ্টেক আগেকার কথা। ছেলের জন্য ক্রিকেট কিট কিনতে গিয়েছিলেন ঝাঁসি পুলিশ লাইনের কনস্টেবল শ্যামনাথ সিংহ। ক্রিকেটের পুরো কিটস কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না শ্যামনাথের। সেদিন দোকানদারকে শ্যামনাথ বলেছিলেন, কিটসের পুরো টাকা দিতে পারবেন না। নিজের অসামর্থ্যের কথা জানিয়েছিলেন। দোকানদার সটান উত্তর দিয়েছিলেন, পুরো কিটস কেনার সামর্থ্য যখন নেই, তাহলে দোকানে এসেছেন কেন? সেদিন শ্যামনাথ দোকানদারকে কোন উত্তর দিতে পারেননি। অর্ধেক কিটস কিনে বাড়িতে চলে এসেছিলেন। ছেলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে সুযোগ পাওয়ার ৮ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন ঝাঁসি পুলিশ লাইনের হেড কনস্টেবল শ্যামনাথ সিংহ। চোট পেয়ে চলতি আইপিএল থেকে ছিটকে গেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মহম্মদ আর্শাদ। তাঁর জায়গায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে নিয়েছে বাঁহাতি স্পিনার কুমার কার্তিকেয় সিংহকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সুযোগ পাওয়া কার্তিকেয়ার জন্ম ক্রীড়া পরিবারেই। বাবা শ্যামনাথ সিংহ মধ্যপ্রদেশের সুলতানপুরের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন একজন শ্যুটিং খেলোয়াড়। ছেলে কার্তিকেয় বাবার কাছ থেকেই খেলাধূলার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন কার্তিকেয়। ২০১৮ সালে কেরালার বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ২০১৯ সালে সৈয়দ মুস্তাক আলিতে অভিষেক সিকিমের বিরুদ্ধে। মহম্মদ আর্শাদ খান চোট পাওয়ায় তাঁর জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ঝাঁসি পুলিশের আধিকারিকরা যখন কার্তিকেয়র আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার কথা জানতে পারেন, তখন পুলিশ ক্যাপ্টেনসহ অন্যান্য অফিসাররা শ্যামনাথকে অভিনন্দন জানান। পুলিশ লাইনে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্যামনাথ বলেন, ছেলে যখন ভারতীয় দলের জার্সি পরার সুযোগ পাবে, সেদিন তিনি সবথেকে বেশি খুশি হবেন। ছেলে ফোন করে আমাকে আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ক্যাপ্টেন স্যার, সিও স্যার এবং সমস্ত স্টাফ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি জাতীয় শুটিংয়ে অংশ নিয়েছি। আমাকে দেখে ছেলে খেলায় আসে। পড়াশোনাতেও খুব ভাল ছিল। খেলার প্রতি ওর বেশি আগ্রহ দেখে খেলায় মনোযোগ দিতে বলেছিলাম। আমার আত্মীয়রা আমাকে বলেছিল যে আমি ওর ভবিষ্যত নষ্ট করছি। ওকে পুলিশে ভর্তি করাতে পারতাম। কারও কথা শুনিনি। আমার দেওয়া লক্ষ্য থেকে ছেলে পিছিয়ে যায়নি। শ্যামনাথ আরও বলেন, সামনে অনেক বাধা ছিল। ছেলের সব চাহিদা মেটাতে পারিনি। একসময় ছেলে বলত, আর হয়তো খেলতে পারবে না। আমি ওকে হাল ছাড়তে নিষেধ করেছিলাম। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শ্যামনাথ। তিনি জানান, দুই ছেলের জন্য কিটস কিনতে দোকানে গিয়েছিলেন। দুটো কেনার টাকা ছিল না। তখন দোকানদার বলেছিল, শুধু একটি কিটস কিনুন। জিনিসপত্র খুব দামী। টাকা কম থাকার কারণে কিছু জিনিস কমিয়ে নিয়েছিলাম। এ নিয়ে দোকানদার বলেছিলেন, সামর্থ না থাকলে দোকানে এসেছেন কেন? সেদিন কিছু বলতে পারিনি। কখনই সম্পূর্ণ কিটস ছেলেকে কিনে দিতে পারেনি।